ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং পশ্চিমের অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়াকে শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী যুগের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ যুদ্ধ এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা নতুন একটি বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মঞ্চ তৈরি করে ফেলছে। যে কেউ এ নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন: শক্তিধরেরা যা ইচ্ছা তা–ই করতে থাকবে এবং দুর্বলদের তার ফল ভোগ করতে হবে।
এটা সত্য যে সারা বিশ্বের নেতা ও পর্যবেক্ষকেরা প্রায়ই ‘আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’কে শক্তিশালী বা রক্ষা করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সে ব্যবস্থা সব সময়ই বাস্তব অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী চাওয়া ছিল।
বাস্তবতা হলো, যে দেশগুলো সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী, তারা এ নিয়মগুলো কেবল তৈরি ও প্রয়োগ করার অধিকার সংরক্ষণই করে না, সেগুলো তাদের মর্জিমতো ভঙ্গ করারও অধিকার রাখে।
যাঁরা নিয়ম বানান, তাঁরাই যখন নিয়ম ভঙ্গ করেন, তখনই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি দেখা দেয়। শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে পরাশক্তিগুলোর প্রথম সংঘাত একে অপরের বিরুদ্ধে শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়ে সে অবস্থা তৈরি করেছে। শক্তিধর দেশগুলো তাদেরই বানানো আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের ওপর নৃশংস প্রথাগত সামরিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বাস করেন, ইউক্রেন তাঁর দেশেরই অংশ এবং দেশটিকে ক্রেমলিনের আওতায় ফিরিয়ে আনার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক হাইব্রিড যুদ্ধ চালাচ্ছে।
যুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনীকে পশ্চিমারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাই ১৩৫ কোটি ডলারের প্রাণঘাতী অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন। ইউক্রেনে এসব অস্ত্রের কিছু চালান গেছে। কিছু যেতে বাকি রয়েছে। পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। তারা কার্যত পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আর্থিক ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করেছে এবং অনেক ধনী রাশিয়ানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। পশ্চিমারা একটি আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করেছে। অনেক দেশ এখন রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করেছে।

Post a Comment